বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি স্বাধীন দেশ। এটি ভারত ও মিয়ানমারের সীমানায় অবস্থিত, আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর দ্বারা বেষ্টিত। বাংলাদেশের পূর্ব নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশটি পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হয়। চলুন বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশদে জানি।
১. ভূগোল ও জলবায়ু
বাংলাদেশের আয়তন প্রায় ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হওয়া নদীগুলি বাংলাদেশে এসে একত্রিত হয়ে বৃহৎ নদ-নদীর সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে প্রধান হলো পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবনের মতো বড় ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে, যা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য পরিচিত।
জলবায়ুর দিক থেকে, বাংলাদেশে সাধারণত গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল ও শীতকাল থাকে। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যা কৃষির জন্য উপযোগী হলেও প্রায়শই বন্যার সৃষ্টি করে। শীতকালে এখানে বেশ ঠান্ডা পড়ে।
২. জনসংখ্যা ও ভাষা
বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যাবহুল দেশ। প্রায় ১৬ কোটি লোকের বসবাস এ দেশে। জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলিম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী লোকেরাও এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। সরকারি ভাষা বাংলা, তবে ইংরেজি অফিসিয়াল ও উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
৩. অর্থনীতি
বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক হলেও বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান উৎপাদক দেশ হিসেবে পরিচিত। এছাড়া জাহাজ নির্মাণ, ঔষধ শিল্প, এবং প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। কৃষি পণ্যগুলোর মধ্যে ধান, পাট, চা, ও চিনি উল্লেখযোগ্য।
৪. ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, যা বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য পরিচালিত হয়েছিল। এরপরে ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন হয়। স্বাধীনতার পর দেশটি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করেছে।
৫. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
বাংলাদেশের সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় এবং বর্ণাঢ্য। বাংলা নববর্ষ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং অন্যান্য উৎসবকে কেন্দ্র করে এ দেশে বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান পালিত হয়। বাংলাদেশি সঙ্গীত, সাহিত্য, নৃত্য ও চলচ্চিত্র দেশের বাইরে প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো গুণী সাহিত্যিকরা বাংলাদেশের সাহিত্যকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করেছেন।
৬. শিক্ষা ব্যবস্থা
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা – এই তিন ভাগে বিভক্ত। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করে, যার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
৭. পর্যটন ও ঐতিহাসিক স্থান
বাংলাদেশে অনেক সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র এবং ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সুন্দরবন, পাহাড়ি এলাকাসমূহ, সিলেটের চা-বাগান, সোনারগাঁও, বাঘেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, কান্তজির মন্দির ইত্যাদি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যে ভরপুর একটি দেশ।