শসা, একে অনেকেই ‘সুপারফুড’ হিসেবে গণ্য করে থাকে, বিশেষত যারা ওজন কমাতে আগ্রহী। শসায় অধিকাংশই পানি থাকে, এবং এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। তাই এটি খাবার হিসেবে স্বাস্থ্যকর এবং ওজন কমানোর জন্য উপকারী বলে গণ্য করা হয়। আসুন বিস্তারিতভাবে জানি, কীভাবে শসা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা কী কী।
শসার পুষ্টিগুণ
শসা পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও ক্যালোরি কম, যা ওজন কমানোর জন্য আদর্শ। শসার মধ্যে পানির পরিমাণ প্রায় ৯৫% এবং এটি ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আঁশ সমৃদ্ধ। এই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের নানা কার্যাবলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
ওজন কমাতে শসার ভূমিকা
১. নিম্ন ক্যালোরি ঘনত্ব
শসার ক্যালোরি খুবই কম, যা ওজন কমানোর জন্য সহায়ক। এক কাপ শসায় সাধারণত মাত্র ১৬ ক্যালোরি থাকে, যা পেট ভরাতে সাহায্য করে তবে ক্যালোরি যুক্ত হয় না। যেসব খাবারে কম ক্যালোরি থাকে সেগুলো বেশি পরিমাণে খাওয়া গেলেও ওজন বাড়ার আশঙ্কা কম থাকে।
২. পানি এবং হাইড্রেশন
শসার ৯৫% পানি, যা হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং এটি বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি করে। হাইড্রেটেড থাকলে ক্ষুধা কম অনুভূত হয়, ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে।
৩. পেট ভরাট অনুভূতি
শসার মধ্যে পানির পাশাপাশি আঁশও থাকে। আঁশ পেট ভরা রাখতে সহায়ক এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা অনুভব হতে দেয় না। ফলে, শসা খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করার প্রয়োজন কমে এবং এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
শসার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক আঁশ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আঁশ ধীরে ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা থাকে। শসা খেলে পেট দীর্ঘ সময়ের জন্য ভরা লাগে, ফলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়।
৫. ডিটক্সিফাইং প্রভাব
শসার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং শরীরকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। শরীর থেকে টক্সিন বের হলে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
৬. বিপাকক্রিয়া উন্নত করে
শসায় থাকা ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করতে সহায়ক। বিপাকক্রিয়া উন্নত হলে শরীর বেশি ক্যালোরি পোড়াতে পারে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধির কারণে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়ে।
৭. কম কার্বোহাইড্রেট
শসায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ খুবই কম, যা শরীরের শর্করা গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম রাখে। কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ফলে শরীর ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে, যা ওজন কমানোর জন্য সহায়ক।
৮. লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স
শসার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে না। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ এবং ওজন কমাতে সহায়ক।
শসা খাওয়ার কিছু উপায় যা ওজন কমাতে সহায়ক
- শসা সালাদ: শসা কাঁচা খাওয়া যায়, এবং এটি সালাদে বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এতে ক্যালোরি কম থাকে এবং পুষ্টি বেশি পাওয়া যায়।
- শসা পানি: শসা পানি হাইড্রেশন বৃদ্ধি করে এবং এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
- শসার স্মুদি: শসা, লেবু, আদা ও পানি মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেলে এটি শরীরের জন্য রিফ্রেশিং এবং হালকা খাবার হিসেবে কার্যকর।
শসা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী
শসায় ভিটামিন সি এবং কোলাজেন থাকে, যা ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী। নিয়মিত শসা খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
২. কিডনি ফাংশন এবং ডিটক্সিফিকেশন
শসা শরীরের অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করে দেয় এবং কিডনি ফাংশন উন্নত করতে সহায়ক। কিডনি ভালোভাবে কাজ করলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করা সহজ হয়।
৩. অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে
শসার মধ্যে থাকা আঁশ অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় এবং অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
শসা খাওয়ার সাবধানতা
শসা সাধারণত নিরাপদ হলেও অতিরিক্ত শসা খাওয়া কিছু ক্ষতি করতে পারে। শসায় অল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকলেও অতিরিক্ত শসা খেলে পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে।
উপসংহার: শসা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি একটি সহায়ক খাদ্য হিসেবে কাজ করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের প্রয়োজন।