ডায়াবেটিস কী?
ডায়াবেটিস (Diabetes Mellitus) হলো এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেখানে শরীর রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর মূল কারণ হলো ইনসুলিনের অভাব বা ইনসুলিনের প্রতি শরীরের প্রতিরোধ।
ইনসুলিন:
ইনসুলিন একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয় (pancreas) থেকে নিঃসৃত হয় এবং এটি শরীরকে রক্তের শর্করা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস:
- এটি একটি অটোইমিউন রোগ।
- শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভুলক্রমে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ধ্বংস করে।
- সাধারণত শিশু বা তরুণ বয়সে শুরু হয়।
- ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়া প্রয়োজন।
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস:
- এটি ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে হয়।
- শরীর ইনসুলিন ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
- প্রাথমিকভাবে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes):
- গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে এটি হয়।
- গর্ভের সন্তান এবং মায়ের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।
ডায়াবেটিস কেন হয়?
ডায়াবেটিসের কারণ বিভিন্ন হতে পারে:
- জিনগত কারণ:
- পরিবারের কারও ডায়াবেটিস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
- লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর:
- অতিরিক্ত ওজন।
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (মিষ্টি বা ফাস্ট ফুড বেশি খাওয়া)।
- নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব।
- শারীরিক কারণ:
- ইনসুলিনের অভাব।
- ইনসুলিন প্রতিরোধ।
- অন্যান্য কারণ:
- উচ্চ রক্তচাপ।
- উচ্চ কোলেস্টেরল।
- মানসিক চাপ।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা (পিপাসা)।
- বারবার প্রস্রাব।
- সব সময় ক্লান্তি অনুভব করা।
- দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া।
- ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া।
- ওজন হ্রাস (টাইপ ১ ডায়াবেটিসে)।
ডায়াবেটিসের প্রতিকার ও নিয়ন্ত্রণ
ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব না হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ
- শর্করাযুক্ত খাবার কম খান।
- সবজি, ফলমূল ও উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খান।
- কম ক্যালোরি ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন।
ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
- নিয়মিত হাঁটুন।
ওষুধ এবং ইনসুলিন
- টাইপ ১ ডায়াবেটিসের জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন জরুরি।
- টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ বা ইনসুলিন প্রয়োজন হতে পারে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
- নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করুন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন।
জীবনযাত্রা পরিবর্তন
- মানসিক চাপ কমান।
- পর্যাপ্ত ঘুমান।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
জটিলতা এড়ানোর জন্য সতর্কতা
- হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির সমস্যা, চোখের ক্ষতি এবং স্নায়ুর সমস্যা থেকে বাঁচতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ডাক্তারের পরামর্শ:
ডায়াবেটিস হলে ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করুন। নিয়মিত চেকআপ করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
1 Comment
Good Information.